গল্পকুঞ্জ

ভারতের রেলওয়ে সিরিয়াল কিলার রহস্য: রাহুল জাটের পুরো কাহিনি

ভারতে সম্প্রতি একটি ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যা রেলওয়ে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন রাহুল জাট (যিনি রাহুল সিং জাট, রাহুল করমবীর জাট বা ভোলু নামেও পরিচিত), একজন ৩০ বছর বয়সী যুবক, যিনি হরিয়ানার রোহতকের বাসিন্দা। তিনি গুজরাটের ভালসাদ জেলায় একটি ১৯ বছরের কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এবং পরবর্তীকালে আরও পাঁচটি হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, যার মধ্যে চারটি চলন্ত ট্রেনে এবং একটি রেলস্টেশনের কাছে ঘটেছে।

ঘটনার শুরু এবং গ্রেপ্তার

২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর গুজরাটের ভাপি রেলস্টেশনে রাহুল জাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের পিছনে ছিল ভালসাদের উদভাদা এলাকায় একটি যুবতীর ধর্ষণ ও হত্যার তদন্ত। পুলিশের মতে, রাহুল জাট অপরাধ স্থলে ফিরে এসে নেক্রোফিলিয়া (মৃতদেহের সাথে যৌনকর্ম) করেছিলেন, যা একটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিবরণ। অপরাধের পর তিনি ফলের সালাদ খেয়ে শান্তভাবে ৮ কিলোমিটার হেঁটে পার্দি রেলস্টেশনে গিয়ে ভাদোদরাগামী ট্রেনে চড়েন। পুলিশ ২০০০টিরও বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং ছয়টি রাজ্যের যৌথ তদন্তের মাধ্যমে তাকে ধরতে সক্ষম হয়। তার একটি খোঁড়া চলন এবং একটি সোয়েটশার্ট সনাক্তকরণে সাহায্য করেছে।

স্বীকারোক্তি এবং অন্যান্য হত্যা

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে রাহুল জাট অক্টোবর থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ছয়টি হত্যার কথা স্বীকার করেন। তার শিকাররা প্রধানত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ছিলেন, যাদের তিনি চলন্ত ট্রেনে আক্রমণ করতেন। এর মধ্যে একটি হত্যা ছিল দভোইতে একজন আংশিক অন্ধ ব্যক্তির। হত্যাগুলি গুজরাট, মহারাষ্ট্র সহ চারটি রাজ্যে ঘটেছে। পুলিশের মতে, তিনি তার শিকারদের ট্রেনের মধ্যে লক্ষ্য করে হত্যা করতেন, যা রেলওয়ে নিরাপত্তার একটি গুরুতর দুর্বলতা প্রকাশ করে।

পটভূমি এবং মানসিকতা

রাহুল জাটের পটভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সীমিত, তবে তিনি হরিয়ানার রোহতকের বাসিন্দা এবং তার অপরাধগুলি একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে। গুজরাটে সিরিয়াল কিলারদের মানসিকতা বিশ্লেষণ করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে এই ধরনের অপরাধীরা প্রায়শই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তবে রাহুল জাটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্যের বিবরণ এখনও প্রকাশিত হয়নি।

সমাজ ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে মিডিয়াকে অভিযোগ করেছেন যে তারা অভিযুক্তের নাম উল্লেখ না করে খবর প্রকাশ করছে। উদাহরণস্বরূপ, এনডিটিভির একটি খবরে নাম না উল্লেখ করায় সমালোচনা হয়েছে। এটি রেলওয়ে নিরাপত্তা এবং প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই কাহিনি ভারতীয় রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তদন্ত চলমান, এবং আরও বিবরণ প্রকাশিত হতে পারে।

Show More

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button