বাংলাদেশ

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প: অপরাধের স্বর্গরাজ্য

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্প অপরাধের একটি কুখ্যাত কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে দাগি মাদক ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীরা অসংখ্য মামলা সত্ত্বেও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যৌথবাহিনীর ঘন ঘন অভিযানে মাদক, অর্থ এবং অস্ত্র উদ্ধার হলেও, বিচার ব্যবস্থার প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ঢাকার সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলির একটি। এটি হত্যা, মাদক ব্যবসা এবং অপরাধী চক্রের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মতো ঘটনায় বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সতর্ক রয়েছে, একের পর এক অভিযান চালিয়ে মাদক, অর্থ এবং অস্ত্র উদ্ধার করছে। তবুও অপরাধ থামছে না। সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা অপরাধীদের একাধিকবার গ্রেফতার করেছে।

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা বলেন, বুনিয়া সোহেল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গোলাগুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি মামলা রয়েছে। তিনি রমজান মাসে জামিন পেয়েছেন। আরেক মাদক সম্রাট পিচ্চি রাজার বিরুদ্ধে একটি তালিকায় ১২টি মামলা। তিনি এক মাস আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কুখ্যাত মাফিয়া চুয়া সেলিমের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা। রমজানের এক মাস আগে তিনি জামিন পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গত ১০ মাসে আমরা এদের এমনভাবে দমন করেছি যে তাদের অস্তিত্বই ছিল না।

জেনেভা ক্যাম্পের কুখ্যাত সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেল, তার ভাই টুনটুন, চুয়া সেলিম এবং পিচ্চি রাজা—প্রত্যেকের মাথায় মামলার পাহাড়। এগুলো নিয়ে তারা নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে এবং নতুন মামলা যোগ করছে। এক-দু মাসের মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও গুরুতর অপরাধ ঘটাচ্ছে।

সিএমএম কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, পুলিশের মামলা সাজানোয় দুর্বলতা থাকায় অপরাধীরা সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, জামিনপ্রাপ্ত অপরাধী পুনরায় অপরাধে জড়ালে জামিনদার এবং জিম্মাদারদের দায়ী করার বিধান শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।

ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে জামিন না পেলে তারা সেশন জজ কোর্টে যায়। সেশন জজ কোর্টে না পেলে মামলা হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্টের অসীম ক্ষমতা রয়েছে। হাইকোর্ট অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারে।

সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞরা সকলে বলছেন, চিহ্নিত অপরাধীদের জামিন প্রতিরোধ না করা গেলে সমাজে অপরাধ বাড়বে। শৃঙ্খলা ফিরবে না।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button