বাংলাদেশ

১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লুটপাটে উধাও পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন অর্থ লোপাটের চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, অন্তত ২০টি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে লুটেরা গোষ্ঠী। এ ধরনের অনিয়মে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ভয়াবহভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকায়।

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর—এই তিন মাসেই ব্যাংক খাতের মূলধন ঘাটতি ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৫৩ হাজার কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি ঘাটতি জনতা ব্যাংকে—৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৮,১৯৯ কোটি), ইউনিয়ন ব্যাংক (১৫,৬৯০ কোটি), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১৩,৯৯১ কোটি) ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (১২,৮৮৫ কোটি)।

বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে অন্তত ২০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতির এই তালিকায় রয়েছে। এমনকি কিছু ব্যাংকের ঘাটতি হাজার কোটির নিচে থাকলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি চরম সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

মূলধন ঘাটতির কারণ হিসেবে উঠে এসেছে:

  • উচ্চ হারে খেলাপি ঋণ
  • প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থতা
  • পুরনো লোকসান বহন
  • ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও রাজনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যেখানে গত বছরের তুলনায় তা বেড়েছে ১ লাখ কোটির বেশি।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন মন্তব্য করেছেন, লোপাট ও দুর্বল পরিচালনার কারণে ব্যাংকগুলো নিজেদের মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না এবং গ্রাহক আস্থা হারাচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের মতে, গত দেড় দশকে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ফলে অন্তত ৩০টি ব্যাংকের অবস্থা আজ শোচনীয়।

বেশ কয়েকটি ব্যাংক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা নিয়মিত কর্মীদের বেতন বা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব ব্যাংকের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় আন্তর্জাতিক লেনদেনেও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা এবং নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button