স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য বাজেটে ঘাটতি, ব্যয় বাড়ছে নাগরিকদের কাঁধে

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছরে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করে প্রায় ৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকা, যা সে সময়ের জাতীয় বাজেটের মাত্র ছয় শতাংশ ছিল। এরপর গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসক ও রোগীর সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যখাতে প্রকৃত বরাদ্দ আশানুরূপ বাড়েনি—বরং কিছু অর্থবছরে কমে গেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের মাত্র ৪.৮ শতাংশ (২৫,০২৮ কোটি টাকা)। আগের অর্থবছরে তা ছিল ৫ শতাংশ (২১,৬৪৭ কোটি টাকা)। এই হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।

জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব বলছে, ২০২০ সালে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮.৫ শতাংশ জনগণকে নিজ খরচে বহন করতে হয়েছে। আফগানিস্তান বাদ দিলে এশিয়ায় এ হার সর্বোচ্চ। ২০১২ সালে এই হার ছিল ৬২ শতাংশ—অর্থাৎ খরচ বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি ও রাষ্ট্র—দুই পর্যায়েই স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পায় না। ফলে জনগণের ব্যয় বেড়েই চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে। যার ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যায়, যেখানে অনেক সময় প্রত্যাশিত সেবা পায় না।’

তার মতে, স্বাস্থ্য খাতে অবহেলার ফলে জাতি ধীরে ধীরে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে এবং এই খাতে বিপুল অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মো. এনামুল হক জানান, মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ ওষুধ ও চিকিৎসা পরীক্ষায় যাচ্ছে। ধনীরা তুলনামূলকভাবে আরও বেশি ব্যয় করছেন, ফলে সামগ্রিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, বাংলাদেশের মতো দেশে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ বরাদ্দ দরকার, যেখানে বাস্তবে তা ১ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করে।

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেটে বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যয়ের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। ‘প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর ফলাফল বা কার্যকারিতা যাচাই হয় না।’

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ সোভেন নিয়েলসনের মতে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি ব্যয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশে নামানো গেলে তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করে এবং বরাদ্দকৃত অর্থ দক্ষভাবে কাজে লাগাতে পারলে স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো সম্ভব।

Show More

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button